শতাব্দী জুবায়ের : একুশে বইমেলা প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। বইমেলায় যখন কোনো শিশুর কোমল পায়ের পদচারণা দেখি তখন মনের অজান্তেই ভালোলাগা কাজ করে। আজকের যে শিশু বইমেলায় আসছে তারা একসময় দগ্ধ পাঠক হবে, হবে লেখক। হাল ধরবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের। তাদের বইমেলায় আসার অভ্যাস হচ্ছে। যে সকল অভিভাবক তাদের সন্তানদের বইমেলায় নিয়ে আসছেন তাদের স্যালুট জানাই। শিশুরা বইমেলায় এসে নানা ধরনের বই দেখছে। বই না পড়ুক কিন্তু বই দেখছে তো- এটাই অনেক কিছু। অবশ্য বাংলাদেশে শিশু সাহিত্যের জগতটা বেশ এগিয়ে আছে। আরো এগিয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা করি।
শিশুসাহিত্য পৃথিবীর সব দেশের সাহিত্যেই আছে। শুধু বাংলাদেশে আছে এমনটা না। একজন শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে বই। একটি বই একজন শিশুকে ভাসায় কল্পনার সাগরে। তাই বই পড়লে শিশুর কল্পনা শক্তি বেড়ে যায়। যেটা সিনেমা বা অন্য কোনো কিছু করলে এতটা বিকশিত হয় না।
আমরা সমাজের নানা রীতি মেনে চলি। যেমন বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাই। তখন শিশুরাও আমাদের সঙ্গে থাকে। বাংলাদেশে মাসব্যাপী বইমেলা হয়। এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে বইপ্রেমীদের জন্য। তাদের তৃতীয় ঈদ বা পূজা তো বইমেলাই। সেখানের অতিথি হলে দোষ কোথায়? এটাও একটা রীতের মধ্যে রাখুন না। কারণ শিশুদের বেড়ানোও হলো বইও দেখা হলো। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেবে শিশুরা। দেখবে নানা রকম সজ্জায় সজ্জিত হাজার হাজার বই।
পৃথিবীতে একজন মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু বই। বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর কিছুই হতে পারে না। বই শুধু আনন্দের মাধ্যম নয়। একটা বই থেকে নানা কিছু শিখতে পারে একজন পাঠক। যেটা কোনো বন্ধু শেখাতে পারে না। বন্ধুর সঙ্গে একজনের ঝগড়া হতে পারে কিন্তু বই আপনার সঙ্গে ঝগড়া করবে না। বরং আপনার নিজের মন ও মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।
আমরা এখন শিশুদের কি দিচ্ছি তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে। তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি অ্যান্ড্রয়েড ফোন। সেখানে নানা ধরনের খেলা খেলে যে শিশু সময় কাটাচ্ছে, সে আসলে কতটুকু শিখছে। তার কল্পনার ও ভাবনার জায়গাটা কী তৈরি হচ্ছে? নাকি একটা গেম নিয়ে পরে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেটা তার মানসিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন। একটি পরিবারের বাবা-মা বা অভিভাবক যা করেন, শিশুদের যা শেখান তা তার মধ্যে দেখা যায়। বাবা-মায়ের কথা চাল-চলনও সন্তানদের মধ্যে দেখা যায়। অর্থাৎ ওরা যা করে তারা তাই করার চেষ্টা করে। তাই বাবা মা যদি পাঠাভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে সন্তানও সেটাই অনুসরণ করবে। তারাও পড়তে বসবে।
শিশুরা গল্প পড়তে এবং শুনতে ভালোবাসে। তাই শিশুদের গল্প শোনান অথবা গল্পের বই কিনে দিন। আরো দিতে পারেন সায়েন্স ফিকশন। যেটা শিশুকে ভাবনার জগৎ তৈরি করে দেবে, ভাবতে শেখাবে। শিশুরা প্রশ্ন করতে চায়। অনেক অভিভাবক আছেন শিশুরা প্রশ্ন করলে বিরক্ত হন। মনে রাখবেন শিশুদের আছে একটি কৌতূহল মন। তারা কোনো কিছু না জানলে এবং না বুঝলে প্রশ্ন করবেই। তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিন। প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করুন। কারণ শিশু প্রশ্ন না করলে সে শিখবে কি করে? যদি কোনো শিশু প্রশ্ন না করে তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে সমস্যা আছে। সে হয়তো ভয় পায় অথবা লজ্জা পায়। সে যদি কোনো বিষয় লুকায় তাহলে অনেক কিছুই তার অজানা থেকে যাবে। পরবর্তীতে সে সমস্যায় পড়বে। সম্পূর্ণভাবে তার মানসিক বিকাশ হচ্ছে না সে কথা বিজ্ঞানও বলে। সে সামনের পৃথিবীকে কিভাবে নেতৃত্ব দেবে, যদি আমরা তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ না দেই, তাদের প্রস্তুত না করি, বই পড়ার সুযোগ না দেই।
কোনো শিশুর সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। কারণ শিশু অবস্থায় সে যদি প্রতারণার শিকার হয় তাহলে সে বড় মাপের প্রতারক হবে না সেটার নিশ্চয়তা কী? তাই শিশুদের প্রতারণা না করে তাদের কথার গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের বই পড়তে দিন। যদি সে কথা বলার সুযোগ পায় তাহলে আরো কথা বলবে। যে যে বিষয়গুলো নিতে পারে সে বিষয়গুলো তার সঙ্গে শেয়ার করুন। যেটি তাকে মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে।
একটা দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শিশু সবকিছুতে সত্য খোঁজে। তাকে কল্পনার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবধর্মী বই দিতে হবে। কারণ সে যদি বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যায় তাহলে নানা প্রতিবন্ধকতা সে তুচ্ছজ্ঞান করে এগিয়ে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের শিশুটিই আগামী দিনের পাঠক, লেখক। তাই তাদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। তাহলেই সে পাবে নিজের ভাবনার জগৎ।